ছোটবেলার বন্ধুত্ব ! সুলতানা পারভীন সুমি


ছোট বেলায় বাহারী রঙের পেন্সিলটির লোভ সামলাতে না পারা বন্ধুটি যখন,ব্যাগে করে সেটি নিয়া গিয়েছিলো। তখন সেটাকে মোটেও চুরি করা বলা যেতে পারে না। বড় হয়ে বন্ধু যখন আপনার  সাথে দেখা হওয়া মাত্র বলে আমি তোর পেন্সিল টা সেদিন চুরি করেছিলাম। তুই সেদিন যা কান্না করেছিলি। তুই তো কথায় কথায় কেঁদে দিতি। এখন এসব শুনে আপনার হাসি পাবে। মাঝেমধ্যে আপনার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ড্রয়িং খাতাটির আসল কাহিনী হয় তো আপনি আজও জানেন না।  বন্ধুরা শয়তানি করে আরেকজনের ব্যাগে ঢুকিয়ে দিত আপনার অজান্তে । এসব কে দুষ্টুমি বলে আবার বাচ্চামো বলা যেতে পারে। সেসময় বন্ধুদের বাবা মায়ের এবং আপনার বাবা মায়ের জিপিএ ৫ পেতেই হবে বলা বাক্য গুলো মনে পড়ে হয় তো এখন আপনার হাসি পায়। কত লড়াই করতো তারা। অথচ সেসব খুব একটা  কাজে আসে নি কারও। কেউ ভার্সিটিতে চান্স না পেয়েও সরকারি কর্মকর্তা। আবার কেউ ভার্সিটিতে পড়েও বেকার। 

ছোটবেলার কিংবা স্কুল জীবনের বন্ধুত্ব গুলো দুষ্টুমি ছিল বাদরামো ছিল। পরীক্ষায় কমন আসেনি বলে পড়ুয়া বন্ধুটির খাতা ঢেকে লেখার দায়ে তাকে পরীক্ষা শেষে স্পেশাল পানিসমেন্ট ঠিকই দেয়া হতো। এখন হুট করে দেখা হলে এসব কথপোকথনে হাসি ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তারপরও জড়িয়ে ধরে বলা যায় সারাদিন এত পড়াশোনা কীভাবে করতি? তোর জন্য আব্বু আম্মুর কত বকা খাইছি। শয়তান, হারামি শালা লুইচ্চা একটা। 

জীবনের কঠিন বাস্তবতা দেখতে হয় গ্রাজুয়েশন করতে এসে৷ এখানে সবাই ভীষণ  সিরিয়াস। কেউ আপনাকে জায়গা ছেড়ে দিবে না৷ আপনাকে আপনার  জায়গা, নিজস্ব অবস্থান নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে৷ এখানে বন্ধু খুব কম হয়। এখানে এক সাথে পড়লে তাদের ক্লাসমেট বলা হয়। বন্ধু হাতে গোনা ৭/৮ জন। এখানে আপনি পরে গেলে কেউ আপনাকে হাত বাড়িয়ে তুলবে না বরং আপনাকে ডিঙিয়ে চলে যাবে। এখানে মুখের মিল টাই মুখ্য জাস্ট ফর্মালিটি। গোপনে আপনার বিরুদ্ধেই তাদের গোল টেবিলে মিটিং বসবে।  আবার মিটিং এর বাকী সদস্যদের নিয়েও অন্য বেলায় আলাদা আলাদা বৈঠক বসবে । এখানে সবাই সবার প্রতিদ্বন্দ্বী ।কেউ আপনাকে মন খুলে তার জীবনের গল্প শোনাবে না। বরং আপনার গল্প সুযোগ বুঝে শুনে নিয়ে আসর জমাবে,হাসি,তামাশায় মাতবে। 
এই জীবনের বন্ধুদের মধ্যে দুষ্টুমি কিংবা বাদরামো থাকে না। থাকে অন্যায়, অপরাধ। তাদের একটা কথার কারনে হয় তো সারারাত কারও নিদ্রা হরন হয়ে যেত। পুরো দিন হয় তো ডিপ্রেশনেই কেটে যেত।

একটা সময় পর এদের কাউকেই আপনার মনে পড়বে না। বন্ধু বলতে ওই হাতে গোনা কয়েকজনই থেকে যাবে। হয় তো অনেকেই ব্লক লিস্টেও চলে যাবে। তারপর সংসার স্বামী/বউ সন্তান হবে জীবনের লক্ষ্য। মাঝখানে আসা এসব লোকজনদের জন্য অযথা অশ্রুপাত, নিজেদের মূল্যবান সময় অপচয় নিয়ে হাসি পাবে। 

জীবন স্রোতের মত বহমান। 
বাবা,মা,বউ/স্বামী, সন্তানই জীবনের অংশ মাঝখানে দুই এক জন রক্তের  সম্পর্কের চেয়ে বেশি কিছু হয়ে যায় যাদের বন্ধু বলে।🌼

লেখাঃ সুলতানা পারভীন সুমি 

Comments